এম.জুবাইদ.পেকুয়া :
বর্তমানে স্বাভাবিক ও গতানুগতিক পদ্ধতিতে যেখানে এক একরে ১০০-১৫০ কেজি চিংড়ী উৎপাদন হয় সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে একর প্রতি সাড়ে ৩ হাজার কেজীর বেশী চিংড়ী উৎপাদন করা সম্ভব। কক্সবাজারের খুরুষ্কুলে একটি পাইলট প্রকল্পে সফলতার পর এবার দেশের বৃহত্তম মৎস্য প্রজেক্ট এরিয়া রামপুর চিংড়ী জোনে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে নিরাপদ চিংড়ী চাষের সম্ভাব্যতা যাঁচাইয়ে পরিদর্শনে এসেছে একটি আন্তর্জাতিক প্রতিনিধিদল। গতকাল তারা রামপুরের ১০ একর, ১১ একর প্রকল্প ও মৎস্য অধিদপ্তরের প্রদর্শনী চিংড়ী খামার সহ বিভিন্ন প্রজেক্ট পরিদর্শন করেন। ন্যাশনাল স্যানিটেশন ফাউন্ডেশন ও ইন্টারন্যাশনাল ফুড প্লানিং রিসার্স ইনষ্টিটিউশনের কান্ট্রি ডিরেক্টর মি. ক্রেইগ এ মেইজনার এ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন। তাদের সাথে ছিলেন, বাংলাদেশ ফুজেন ফুডস এক্সপোর্টস এসোসিয়েশনের সাবেক সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান, বর্তমান সেক্রেটারী জেনারেল এস এম মোরশেদ জাফর, পরিচালক ও দৌদুল কুমার দত্ত, ১১ একর চিংড়ী চাষ প্রকল্পের সাধারন সম্পাদক সৈয়দ নুরুল আকবর, ১০ একর চিংড়ী চাষ প্রকল্পের সাধারণ সম্পাদক মিজানুর রহমান প্রমূখ।
শুধু সাড়ে ৩ হাজার গুণ বেশী চিংড়ী উৎপাদন নয় নিরাপদ চিংড়ী চাষের পাশাপাশি প্রকল্প পাড়ে সবজী বিপ্লব করাও সম্ভব বলে মনে করেন ঘের মালিকরা। এরকম একটি প্রদর্শনী খামার রামপুর ১০ একর প্রকল্পের ৩ নং ফোল্ডারের একষট্টি প্লটের একটি চিংড়ী খামারে গিয়ে দেখা যায়, চিংড়ী খামারের চারপাশের বেড়ীবাঁধে ঢেঢ়শ, বেগুন, শসা, করলা সহ বিভিন্ন প্রকার সবজী ফলানো হয়েছে। লবণ পানির মধ্যে এসব সবজী কিভাবে চাষ হয় জানতে চাইলে সেখানকার কর্মচারী আবদুল গফুর জানান, গভীর টিউবঅয়েল বসিয়ে অথবা শুধুমাত্র বৃষ্টির পানিতেই এসব সবজি চাষ করা সম্ভব। সঠিক পদ্ধতিতে চাষ করলে লবণের কোন প্রভাব সবজী চাষে পড়বেনা বলে তিনি জানান। একটি ১০ একর প্রকল্প পাড়ে সবজি চাষ করলে লাখ টাকার সবজি উৎপাদন হবে বলে মনে করেন তিনি। এভাবে প্রতিটি প্রজেক্টে সবজী চাষ করা হলে মৎস্য বিপ্লবের পাশাপাশি সবজি বিপ্লব হতেও বেশী সময় লাগবেনা বলে মনে করেন তারা।
বাংলাদেশ ফ্রুজেন ফুডস এক্সপোর্টস এসোসিয়েশনের সেক্রেটারী জেনারেল এসএম মোরশেদ জাফর বলেন, কক্সবাজারের খুরুস্কুল এলাকায় “পাইলট প্রজেক্ট অন এওয়ারনেস অব সাইন্টেফিক শ্রিম্প ফার্মিং” প্রকল্পের সফলতার পর আন্তর্জাতিক অর্গনাইজেশনকে দেশের বৃহত্তম ঘের এরিয়া রামপুর চিংড়ী জোনে সম্ভাব্যতা যাঁচাইয়ের জন্য আহবান জানিয়েছে হিমায়িত মৎস্য রপ্তানীকারকদের চেম্বার অব কমার্স ফ্রুজেন ফুডস এক্সপোর্টস এসোসিয়েশন বাংলাদেশ। এরই প্রেক্ষিতে তারা ভিজিট করতে এসেছে। তিনি বলেন, সাধারণ পদ্ধতিতে চিংড়ী চাষ করলে একর প্রতি যেখানে ১০০ কেজী চিংড়ী উৎপাদন হয় সেখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করলে প্রতি একরে সাড়ে ৩ টন অর্থাৎ ৩ হাজার ৫ শত কেজী চিংড়ী মাছ উৎপাদন হবে। আর সেটা দেশের বৃহত্তম চিংড়ী জোনে চালু করতে পারলে শুধু চকরিয়ার উৎপাদিত চিংড়ী দিয়েই দেশের চাহিদা পূরণ করে বিদেশে রপ্তানি করে দেশের বাজেট পরিমাণ রাজস্ব আয় সম্ভব। তিনি জানান, বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি বলতে মাছের সুষম খাদ্য, বায়ো সিকিউরিটি, পানিতে অক্সিজেন মিশ্রন ও পরিমিত লবনাক্ততা নিশ্চিতকরণকে বুঝায়। প্রতিনিধি দলের প্রধান মি. ক্রেইগ এ মেইজনার জানান, “রামপুরের প্রজেক্টগুলোতে কোনপ্রকার সাইন্টেফিক পদ্ধতি নেই। স্বাভাবিক পদ্ধতিতেই চাষ হয়। আর তাই খুব কম চিৎড়ী উৎপাদন হয়। ঘের গুলোর ক্যানেল, বেড়ীবাঁধ, ওয়াটার লেবেল ঠিক করে এখানে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষ করতে পারলে বাংলাদেশকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হবেনা। এ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চিংড়ী চাষে সচেতনতা বৃদ্ধিতে সরকারের পূর্ণ সহায়তা এবং পর্যাপ্ত অর্থনৈতিক সাপোর্ট দরকার হবে বলে মনে করেন তিনি।
পাঠকের মতামত: